
মোঃ নমশের আলম।।
স্মার্টফোন দিয়ে দুর্দান্ত ফটোগ্রাফি বা ভিডিও করতে চান? শুধু বেশি মেগাপিক্সেল নয়, জেনে নিন ভালো ক্যামেরা ফোন বাছাইয়ের আসল নিয়ম।
১. প্রসেসরের মান:
সবচেয়ে আপডেটেড ও শক্তিশালী প্রসেসর থাকলে ছবি প্রসেসিং ভালো হয়। ফলে ক্যামেরায় দ্রুত ফোকাস, শার্প ইমেজ এবং উন্নত ভিডিওর অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।
২. সেন্সরের আকার:
সেন্সরের আকার যত বড়, আলো ধারণ ক্ষমতা তত বেশি, ছবিতে তত বেশি ডিটেইলস থাকবে। ফলে কম আলোতেও ভালো ছবি তোলা যায়। মনে রাখবেন, ১২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরায় ১০৮ মেগাপিক্সেলের চেয়ে বড় সেন্সর থাকতে পারে। ভালো ফটোগ্রাফির জন্য সেটাই বেশি কার্যকর ফলাফল দিতে পারে।
৩. অ্যাপারচার:
এরপর গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপারচার। এফ ১.৮ বা তার চেয়ে কম অ্যাপারচার থাকলে ক্যামেরা বেশি আলো নেয় এবং নাইট ফটোগ্রাফি ভালো হয়। তাই ক্যামেরার স্পেসিফিকেশন দেখতে গিয়ে অ্যাপারচার অবশ্যই যাচাই করুন। সাধারণত স্মার্টফোনে ক্যামেরার নিচে অথবা বক্সের গায়ে লেখা থাকে অ্যাপারচার এফ ১.৪, ১.৮ অথবা ২.০। এই সংখ্যাটা যত কম হবে, অ্যাপারচারের আকার তত বড়। তাই বাইরে থেকে আলো তত বেশি আসবে এবং ছবি ঝকঝকে হবে। অ্যাপারচার এফ ১.৪ পর্যন্তই ম্যাক্সিমাম।
৪. ক্যামেরার সংখ্যা ও ধরন:
মিডরেঞ্জের বেস্ট ক্যামেরা ফোনের জন্য এই পয়েন্টটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ফটোগ্রাফির জন্য ম্যাক্সিমাম তিনটি ক্যামেরা দরকার।
প্রাইমারি সেন্সর: সবচেয়ে ভালো কোয়ালিটির হতে হবে।
আলট্রা ওয়াইড লেন্স: কমপক্ষে ১২ মেগাপিক্সেল হওয়া উচিত। তাতে ছবির ডিটেইলস বেশি থাকবে।
টেলিফটো জুম লেন্স: এই লেন্সের মানে আপনি কারও ঘরের মধ্যে উঁকি দিয়ে দেখবেন বিষয়টা এমন না। পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফির জন্য এটি দরকার। শুধুই নামেই টেলিফটো হলে হবে না, কার্যকরও হতে হবে। অনেক কোম্পানি টেলিফটো লেন্স দেয় কিন্তু তা দিয়ে পোট্রেট ছবি তোলা যায় না। তাই ফোন কেনার আগে অবশ্যই এটি যাচাই করে নিতে হবে।
ম্যাক্রো লেন্স: ম্যাক্রো লেন্স আলাদাভাবে না থাকলেও আলট্রা ওয়াইড লেন্সে এটি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। স্মার্টফোনের এই তিন ক্যামেরার ছবি অবশ্যই যেন একটি আরেকটির কাছাকাছি হয়। এক ক্যামেরার ছবি খুব ভালো, আরেক ক্যামেরার ছবি কালো হয়ে যায়, এমন যেন না হয়, সেটি আগেই যাচাই করে নিতে হবে।
৫. ওআইএস বনাম ইআইএস:
OIS (Optical Image Stabilization) অবশ্যই থাকতে হবে। নাইট ফটোগ্রাফি ও চলন্ত অবস্থায় ভিডিও ধারণ করতো এটি দারুণ কার্যকর। আপনি যখন ছোটাছুটি করে ছবি বা ভিডিও ক্যাপচার করবেন, আপনার ক্যামেরা নড়বে কিন্তু ফুটেজ বা ছবি নড়বে না। ওআইএস থাকলে নাইট ফটোগ্রাফিতে হাত কাঁপলেও তুলনামূলক ভালো ছবি ক্যাপচার করে দেয়।
অনেক কোম্পানি ওআইএস না দিয়ে কেবল EIS (ইলেকট্রনিকস ইমেজ স্ট্যাবিলাইজার) দিয়ে দেয়। যেটি ভিডিও ফুটেজকে সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রসেসিং করে কিন্তু ওআইএসের মতো পারফর্ম করতে পারে না। দামি ফোনের ক্ষেত্রে ইআইএস ফ্রেম ক্রপ করে ভালো ভিডিও করে দিতে পারে, কিন্তু কমদামি বা মিডরেঞ্জের ফোনের ক্ষেত্রে এটি ততটা কার্যকর না।
৬. প্রো বা ম্যানুয়াল মোড:
ভালো ক্যামেরা বোঝার জন্য অনেক সময় আমরা অনেক ফিল্টার আছে কিনা তা দেখি। কিন্তু আসলে দেখা উচিত ক্যামেরায় প্রো বা ম্যানুয়াল মুড আছে কিনা। এই মোড থাকলে ফটোগ্রাফিতে আরও সৃজনশীলতা দেখানো যায়। ফিল্টার ছাড়াই পেশাদার মানের ছবি তোলা সম্ভব হয়।
৭. ভিডিওর জন্য FPS:
স্মার্টফোনে ৪কে ৩০ অথবা ৪কে ৬০ FPS ভিডিও রেকর্ড করার সুবিধা থাকলে সেটি ভিডিওগ্রাফির জন্য সবচেয়ে ভালো। এটি থাকলে ঝকঝকে ডিটেইলস ভিডিও পাওয়ার পাশাপাশি ইচ্ছেমতো এডিটিং করতে পারবেন। আজকাল বিভিন্ন কোম্পানি গিমিকের জন্য ১২০ এফপিএস, ২৪০ এফপিএসে ভিডিও রেকর্ড করা যাচ্ছে বলে বিজ্ঞাপন দেয়। আসলে ওগুলো কোনো কাজের না।১২০ বা ২৪০ FPS শুধু গিমিক, সেগুলো মূলত স্লো মোশনের জন্য, তাই মূল ভিডিওর মান নির্ধারণে এগুলো নয়।