
মোঃ নমশের আলম।।
টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়টা ছিল দলের জন্য খুবই জরুরি। তবে ডালাসে অনুষ্ঠিত এই জয়টি এক পর্যায়ে কঠিন হয়ে পড়েছিল।
মাঠে তখন ‘শ্রীলঙ্কা… শ্রীলঙ্কা… শ্রীলঙ্কা” এই স্লোগানে চারপাশ উল্লসিত। কারণ আঠারো তম ওভারে পর দুই বলে রিশাদ হোসেন ও তাসকিন আহমেদ আউট হয়ে গেছেন, ওভারের শেষ দুটি বল থেকেও কোন রান আসেনি। জয়ের সুবাতাস বইতে শুরু করেছে লঙ্কান দর্শকদের মধ্যে। তাদের কেউ কেউ ‘নাগিন ডান্স’ দিচ্ছেন। ম্রিয়মাণ হয়ে গেছে বাংলাদেশের সমর্থকেরা। সবাই আরও একবার আশা ভঙ্গের শঙ্কায় উৎকণ্ঠিত।
হঠাৎ করেই পাল্টে গেল পুরো চিত্র। গ্যালারির ছবিটাও পলকেই বদলে গেল। লাল-সবুজের গর্জনে কেঁপে উঠল গোটা গ্র্যান্ড প্রেইরি এলাকা। কারণ দাসুন শানাকার ফুল টসের বলটি তখন মিড উইকেট দিয়ে গ্যালারিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। এতেই শ্রীলঙ্কার হাজারও দর্শক নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচের ভাগ্য এক ছক্কাতেই হেলে পড়ল বাংলাদেশের দিকে।
মাঠে লড়ছেন দুই দলের ক্রিকেটাররা। আর ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতেও তুমুল লড়াই চলছে সমর্থকদের। তবে বাংলাদেশের লাল-সবুজ সমর্থকই বেশি ছিল মাঠে। বৈচিত্র্যময় সাজে শ্রীলঙ্কান সমর্থকদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের মতোই উত্তেজনা ছিল এই ম্যাচে। গ্যালারির লড়াইটা ক্ষণে ক্ষণে রং বদলাচ্ছিল।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৪ ওভারে ১০০ রান তুলে ফেলে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু টাইগারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে হঠাৎই ধসে পড়ে শ্রীলঙ্কা। ২০ ওভারে ১২৪ রানেই থমকে গেল তাদের ইনিংস।
১২৫ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লেতে তিন উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয়ের জুটি ভাঙার পর এরপর একের পর এক উইকেট হারানো, শেষের দিকে চরম উত্তেজনা, ম্যাচজুড়ে নানা নাটকীয়তায় সমর্থকদের আবেগও দুলছিল।
রিশাদ, তানজিমরা কেন মাহমুদউল্লাহকে স্ট্রাইক না দিয়ে বড় শট খেলার চেষ্টা করছেন! কেন সহজ ম্যাচ এত কঠিন হয়ে উঠল, দর্শকদের মনে তখন এরকম নানা আক্ষেপ। মাঠের বাইরে টিভি পর্দার সামনে থাকা কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্তরাও চরম টেনশনে। ১২ তম ওভারে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে টানা তিনটি ছক্কা মারেন হৃদয়। ৫১ বলে তখন প্রয়োজন ৩৪ রানের, তখনো উইকেট আছে ৭টি। বলপ্রতি রান করলেও তিন ওভার আগেই খেলা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু সেই ম্যাচটিও হারার আয়োজন প্রায় করে ফেলেছিল বাংলাদেশ।
পরের বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে যান হৃদয়। আর একটু সময় টিকতে পারলে ম্যাচটা তখনই শেষ হতে পারতো। তবে হৃদয়ের ওই তিন ছক্কাই শেষ পর্যন্ত মহামূল্য হয়ে উঠে। ১২ বলে তখন প্রয়োজন ১১ রান, উইকেট আছে দুটি। এই চাপের মধ্যে জয়টা নাগালে এলো মাহমুদউল্লাহর ওই ছক্কায়।
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে লড়াইয়ে ফুল টসে ছক্কা মারতে গিয়েই আউট হয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এবার আর সেটা হতে দেননি তিনি। এক ওভার হাতে রেখেই খেলা শেষ করার কৃতিত্বটুকু তাকেই বেশিই দিতে হয়।
শ্রীলঙ্কা পর পর দুই ম্যাচ হেরে গেল। লঙ্কানরা বাদ পড়া মানেই বাংলাদেশের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হওয়া। আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রীলঙ্কা এখনও বাদ না পড়লেও এই জয়ে বাংলাদেশর সম্ভাবনা বেড়েছে। প্রস্তুতি ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সিরিজ হারার পর প্রথম ম্যাচে জয়টা ছিল বাংলাদেশের জন্য জরুরি। এই জয়ে আরও সামনে ছুটে চলার আশার সূর্য উঁকি দিয়েছে।