নিজস্ব প্রতিনিধি।।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা হতে টানা ভারি বর্ষণের এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় অন্তত ৫০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর বাঁধের চারটি স্থান ভেঙে কমপক্ষে ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
আজ শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ভোর থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪টি স্থান ভেঙে লোকালয়ে পানি আসা শুরু হলে পানি বন্দী হয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। এরমধ্যে মহারশি নদীতে বাঁধ ভেঙে ঝিনাইগাতী শহরে পানি ঢুকে বহু দোকানে এবং বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। ডুবে গেছে উপজেলা পরিষদ সহ বিভিন্ন সরকারী অফিস। উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন ঝিনাইগাতী সদর, গৌরিপুর, ধানশাইল, হতিবান্ধা ও মালিঝিকান্দার অন্তত ৪০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে ও বাঁধ উপচে প্রবল বেগে ঢলের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে দূর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। সদর ইউনিয়নের দিঘিপাড় গ্রামে অনেক বাড়িতে লোকজন আটকা পড়ে আছে। ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারের চেষ্টা করছে তবে নৌকার অভাবে তা ব্যাহত হচ্ছে।
এতে আমন ফসল, সব্জি ক্ষেত সহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তলিয়ে গেছে শতাধিক মাছের ঘের। উপজেলা সদরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডুবে গেছে। বিভিন্ন রাস্তার উপর দিয়ে প্রবল বেগে ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য মতে টানা ভারি বর্ষণের ফলে ঝিনাইগাতীর পাহাড়ি নদী মহারশির পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন বৃষ্টি থেমে গেছে ফলে পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা আপাতত নেই।
এ ব্যাপারে স্থানীয়রা জানায়, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে গতকাল থেকেই মহারশি নদীতে পানি বাড়ছিলো। গভীর রাতে মহারশি নদীর কয়েকটি স্থানে বাঁধ ভেঙে যায়। এরপর পানি ঢুকে প্রবেশ করে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায়।
তারা আরও জানায়, ঝিনাইগাতীবাসীর সারাজীবননে দুঃখ মহারশি নদীর আকস্মিক পাহাড়ি ঢল। প্রতি বছর একাধিকবার ঢলের কবলে পড়ে কোটি কোটি টাকার কৃষি আবাদ বিনষ্ট হয়ে কৃষকরা পথে বসছে। এছাড়াও মাছের ঘের ডুবে গিয়ে কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে যাচ্ছে। ঢলের পানিতে ডুবে প্রতিবছর মানুষ মারা যায়। গত ৫২ বছর ধরে তারা একটি বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন কিন্তু বার বার আশ্বাস দেয়া হলেও আজও তাদের সেই দাবি বাস্তবায়ন করা হয়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার জানান, এ পর্যন্ত ৪ হাজার দুইশ হেক্টর জমির আমন ধানের আবাদ এবং একশত হেক্টর জমির সব্জি ক্ষেত সম্পুর্ণ ডুবে গেছে। সার্বিক ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করে কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, আমরা পানবন্দী এলাকা পরিদর্শন করছি। যারা নদীর তীরবর্তী এলাকায় আটকে পড়েছে তাদের উদ্ধার করা হচ্ছে। এছাড়া শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পানি কমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করা হবে।