দৈনিক শেরপুর রিপোর্ট :
শেরপুরে পৃথক দুর্ঘটনায় ২৪ ঘণ্টায় সড়কে ঝড়ল ৭ জনের প্রাণ। তাদের মধ্যে দ্রুতগামী বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক মোটর সাইকেল আরোহী এবং অপর ঘটনায় দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় সিএনজি চালক ও ৫ জন যাত্রী নিহত হন।
গতকাল রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শেরপুর সদর উপজেলার ভাতশালা জোড়া পাম্প এলাকায় শেরপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মারা যান ৬ জন।
নিহতদের মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষক মোখলেছুর রহমান ও তার স্ত্রী উম্মে কুলসুমের বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আলিনাপাড়া গ্রামে। তারা ওই সিএনজিতে করে এক আত্মীয়ের জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য যাচ্ছিলেন। অথচ দুর্ঘটনায় উভয়েই বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে।
তাঁদের সঙ্গে ঘটনাস্থলেই নিহত হন নকলা উপজেলার গণপদ্দী ইউনিয়নের কিংকরপুর গ্রামের মো. শাহজাহান আকন্দের ছেলে মো. কামরুজ্জামান (২৬) ও মেয়ে মাইসা তাসনিম মিম (২১)। মিম শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ছিল। আর কামরুজ্জামান ছিল শেরপুর সরকারি কলেজের মাস্টার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। আগামী ২ জানুয়ারি মিমের সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষার প্রবেশপত্র তুলতে বড়ভাইকে সাথে নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে নিয়তির নির্মম পরিহাসে দুই ভাইবোন বাড়িতে ফিরেন লাশ হয়ে।
নিহতদের মধ্যে একজন অটোরিকশাচালক লোকমান হোসেন এবং আরেকজন হলেন নকলার চিথলিয়া বল্লাবাড়ি গ্রামের সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাসের স্ত্রী বেসরকারি সংস্থার কর্মী নিনা রানি বিশ্বাস (৪০)।
এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ভাতশালা এলাকার নাজমুল হোসেন জানান, সিএনজি ও রিফাত পরিবহনের বাসটি তাদের নিজ নিজ সাইডে দ্রুতগতিতে যাচ্ছিল। তবে হঠাৎই সিএনজির সামনে চলে আসা একটি কুকুরের সাথে ধাক্কা খেয়ে সিএনজিটি দ্রুতগতির বাসের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে সিএনজিতে থাকা সবাই নিহত হন।
শেরপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক জাবেদ হোসেন মুহাম্মদ তারেক বলেন, ‘বেপরোয়া গতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে লাশগুলো উদ্ধার করে থানায় পাঠিয়েছি।’
আগের রাতে নকলায় যাত্রীবাহী বাসের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে নিহত হয়েছেন নকলা পৌরসভার গ্রিনরোডের দড়িপাড়া এলাকার মৃত আমজাদ আলীর ছেলে ২ দুই সন্তানের জনক মাওলানা উসমান গণি (৩৭)। তিনি নকলা পৌরসভার বাদাগৈড় তাকওয়া মসজিদের ইমাম ও খতিব এবং পারফেক্ট পাবলিক স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক ছিলেন।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিনি মোটরসাইকেল যোগে ফুলপুরের মিচকিপাড়া এলাকায় একটি ধর্মসভায় ওয়াজ করতে যাচ্ছিলেন। পথে, শেরপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া কক্সবাজার মুখী শামীম এন্টারপ্রাইজের একটি যাত্রীবাহী বাসের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাওলানা উসমান গণি তার মোটরসাইকেলসহ বাসের নিচে চলে যাওয়ায় স্থানীয়দের পক্ষে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পরে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা এসে তার মরদেহ ও মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করেন।
এভাবেই প্রতিনিয়ত সড়কে ঝড়ে চলেছে মানুষের মহামূল্যবান প্রাণ। একের পর এক কান্নার মিছিলে যুক্ত হচ্ছে নিহতদের পরিবার।
শেরপুরের পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম জানান, ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ তাঁদের নানাভাবে সচেতন করা হচ্ছে।’
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং দুর্ঘটনা রোধে চালকদের সচেতনতার বিকল্প নেই। মানুষের মহামূল্যবান জীবন বাঁচাতে সকলেই সচেতন হবেন এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।