স্টাফ রিপোর্টার।।
শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনে ঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির প্রভাব শেরপুরেও পড়েছে। গতকাল ১৭ জুলাই বুধবার চার ঘন্টা ধরে চলা কোটা আন্দোলনকারী, পুলিশ ও ছাত্রলীগের ত্রিমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৩০ জন কোটা আন্দোলনকারি, ১০জন পুলিশ ও ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন আহত হয়। ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল। সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়তে গিয়ে দুর্ঘটনা ক্রমে তা হাতে বিস্ফোরিত হয়ে হাতের কবজি উড়ে যায় পুলিশের নায়েক শফিকুল ইসলামের।
এসব ঘটনার জেরে শেরপুরে শতাধিক নামীয় ও ১৪ শত ব্যক্তিকে অজ্ঞাত আসামি করে ৩ টি মামলা করেছে পুলিশ। পুলিশ গতরাতে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে এসব মামলায় অভিযুক্ত ছাত্র শিবির ও ছাত্রদল নেতাসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আকরামুল হোসেন পিপিএম।
পুলিশ জানায় গত রাতেই নালিতাবাড়ী থেকে উপজেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি ও সরকারি নাজমুল স্মৃতি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ওমর ফারুক, শহর ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক আবু সুফিয়ান সানী ও একই কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রিশাদকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও শেরপুর থেকে আরও তিন শিক্ষার্থীকে এবং নকলা থেকে আরও ২ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে আজ সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে সকালের দিকে শহরের বিভিন্ন মোড়ে আন্দোলনকারীদের ছোট ছোট কয়েকটি গ্রুপকে জড়ো হতে দেখা যায়। সকাল ১১টার দিকে শহরে র্যাব ও পুলিশের যৌথ টহল শুরু হয়। ফলে আন্দোলনকারীদের আর কোন তৎপরতা চালাতে দেখা যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে শহরবাসীর স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ ছিল। দুপুরের পর থেকে কিছু কিছু অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল শুরু করে। পরে পরিস্থিতি ক্রমেই স্বাভাবিক হয়ে আসে। শহরে পুলিশ ও র্যাবের টহলসহ শতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন শৃংখলা বাহিনী।
এদিকে সকাল থেকেই শহরের নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান নেয় আওয়ামীগলীগের শত শত নেতাকর্মী। এতে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও শেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ছানুয়ার হোসেন ছানু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির রুমান, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, জেলা মহিলা আ”লীগের সভাপতি শামছুন্নাহার কামাল, ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এড. ফারহানা পারভীন মুন্নিসহ আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের বহুসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিকাল ৪ টার দিকে মিছিল ও সমাবেশ করে আওয়ামীলীগ। মিছিলে বিএনপি-জামাত হটাও স্লোগান দেয়া হয়। এসময় এমপি ছানুয়ার হোসেন ছানু নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনের মধ্যে রাজনৈতিক শক্তি জড়িয়ে পড়েছে । তাই সব ভেদাভেদ ভুলে শেরপুরে আওয়ামীলীগ আজ ঐক্যবদ্ধ । আজকের এই প্রেক্ষাপটে কেউ ঘরে বসে নেই। এই শেরপুরে যেখানেই বিএনপি, জামায়াত দেখবেন সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমরা এই শেরপুরে সকল সন্ত্রাস, বিএনপি ও জামায়াতকে উৎখাত করবো ইনশাআল্লাহ।
এদিকে কোট আন্দোলনকারীদের সূত্র জানায়, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাবে তারা। কোনপ্রকার নাশকতামূল কর্মকাণ্ডে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই বলেও দাবি করেন তারা।
শেরপুর সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম জানান, বুধবারের ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের আহত করা, বিস্ফোরক ব্যবহার ও ভারচুরসহ বিভিন্ন ধারায় মোট ৩টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামী করা হয়েছে ১৫শ জনকে। তন্মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে ৮ জনকে।