
মোঃ নূর-ই- আলম চঞ্চল:
শেরপুরে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা ও বিশিষ্ঠ সমাজসেবক আবুবকর এর ১৮ তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয়েছে। ৩ জুলাই সকাল থেকে নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়।
কর্মসূচি পালনে সার্বিক নির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতা করেন সাবেক পৌর মেয়র ও দু’দফায় নির্বাচিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ হুমায়ুন কবীর রুমান।
এ উপলক্ষে সকালে পবিত্র কোরআনখানি এবং মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে মরহুমের ছেলে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব মোঃ খোরশেদ আলম ইয়াকুব এর তত্বাবধানে পৌর শহরের বয়ড়া পরানপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থীদের মাঝে দুপুরে খাবার পরিবেশন করা হয়।
উল্লেখ্য, জিবদ্বশায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বকর অত্যন্ত সহজ সরল, সাদাসিধে, ন্যায়পরায়ণ ও মিষ্টভাষী একজন মানুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন পরোপকারী মানুষ। মানুষের বিপদে আপদে সব সময় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এখনো তাই জেলাব্যাপী তার সুনাম শোনা যায়।
মহান এই মুক্তিযোদ্ধা ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে শেরপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ছিলো মফিজ উদ্দিন শেখ এবং মাতার নাম ছামরতে বানু।
তিনি ৬ জন পুত্র ও ৩ জন কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। পৌর শহরের মীরগঞ্জ মহল্লায় বাসিন্দা ছিলেন তিনি। শেরপুর জেলা আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন তিনি। এছাড়াও ছিলেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের কমন্ডার, একজন সফল ব্যবসায়ী ও বিশিষ্ট সমাজ সেবক।
ব্যাবসায়ী সংগঠন শেরপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির একজন পরিচালক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি শেরপুর ইউনিটের আজীবন সদস্য, জেলা মিল মালিক সমিতির অন্যতম সদস্য, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
শেরপর নতুন বাসটার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়ী স্থাপনের একমাত্র উদ্যোক্তাও ছিলেন তিনি। মসজিদ, মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরীতে নগদ অর্থ প্রদান সহ সার্বিক সহযোগিতা করেছেন।
মরহুম আবুবকর স্বাধীকার আন্দোলন, ১৯৫২ র ভাষা আন্দোলন, সৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, বিপ্লবী রবি নিয়োগীর সাথে নানা আন্দোলন, অগ্নিকণ্যা বেগম মতিয়া চৌধুরী’র সাথে নানা রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন।
তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (রেসকোর্স ময়দান) সরাসরি উপস্থিত ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে উদ্বোধ্য হয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পুড়া কাসিয়ায় গিয়ে ট্রেনিং গ্রহণ করেন। ট্রেনিং গ্রহন শেষে ১১ নং সেক্টরে কর্ণেল তাহেরের নেতৃত্বে সরাসরি মুক্তিযোদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
জীবনে বহুবার বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভ করেছেন মরহুম আবুবকর। বঙ্গবন্ধু তাকে বাক্কার নামে ডাকতেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে চাচা বলে সম্বোধন করতেন।
সদা কর্মব্যস্ততার মধ্যেও আজীবন তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। মহান এই বীর মুক্তিযোদ্ধা ২০০৬ সালের ৩রা স্ত্রী সন্তান, অসংখ্য আত্বীয় স্বজন ও গুণগ্রাহীকে রেখে ইন্তেকাল করেন।
মরহুমের সন্তানদের মধ্যে তার যোগ্য রাজনৈতিক উত্তরসূরী মোঃ হুমায়ুন কবির রুমান আজ শেরপুরের অন্যতম জননন্দিত জননেতা যিনি শেরপুর পৌরসভার মেয়র এবং দু’দফায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। আরেক ছেলে মোঃ আব্দুল মতিন যিনি জেলা যুবলীগের অন্যতম নেতা। মরহুমের আরেক ছেলে ছাত্রলীগের ১৮৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে নানা আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বেড়ে উঠা বর্তমান জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ন আহবায়ক আলহাজ্ব মোঃ খোরশেদ আলম ইয়াকুব। এছাড়াও তার পরিবারের সদস্যরা সকলেই আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যুক্ত।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুবকরের আজকের এই মৃত্যু বার্ষিকীতে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের কাছে মরহুমের জন্য মাগফেরাত ও দোয়া কামনা করা হয়েছে।