নিউজ ডেস্ক।।
মাঠে চলে দুই দলের খেলা আর আর এই খেলায় বাজি ধরে মাঠের বাইরে খেলে আরেক দল। এভাবেই ক্রিকেট খেলার সাথে জড়িয়ে পড়ছে জোয়া খেলা। সেই বাজিতে একেকটি ম্যাচকে ঘিরে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার বাণিজ্যে নামে মাফিয়ারা। তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে শতশত মানুষ হচ্ছে নিঃস্ব।
আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) খেলায় শেরপুরেও চলেছে এই রমরমা বাজি আর হরেক রকমের জুয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খেলার ফলাফল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চলে এসব জুয়ার বাজি।
এই জোয়ারীদের বাজি নিয়ন্ত্রণ করে একাধিক এজেন্ট। আবার এসব এজেন্টদেরকে নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় মাফিয়া চক্র। এই মাফিয়া চক্রের সখ্যতা রয়েছে প্রভাবশালী মহলের সাথে। এভাবেই দিনের পর দিন চলছে রমরমা ক্রিকেট জুয়া। অপরদিকে তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে উল্টো তাকেই হেনস্থার স্বীকার হতে হয়।
এই চক্রের পাল্লায় পড়ে পাঁচ-দশ হাজার টাকা দিয়ে জুয়া খেলা শুরু করে লোভে পড়ে একপর্যায়ে তারা খোয়াচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। সাধারনত ক্রিকেট খেলার বড় ইভেন্ট সামনে এলেই এই চক্রের তৎপরতা বেড়ে যায়।
এখন চলছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) আসর। এই আসরকে ঘিরে শেরপুর পৌর এলাকায় কয়েকজন এজেন্টের মাধ্যমে প্রতিদিনই লক্ষ লক্ষ টাকার জুয়া খেলা চলছে। শহরের এজেন্টরা সাব এজেন্ট দিয়ে এই দোয়া নিয়ন্ত্রণ করছেন শেরপুর সদর উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন জুড়ে। এসব এজেন্টরা অনলাইনে ক্রিকেট জোয়া খেলার মাধ্যমে প্রতিদিন শেরপুর সদরের গ্রাহকদের কাছ থেকে নেয়া লক্ষ লক্ষ টাকা দেশের বাইরে পাচার করছেন। এতে মধ্যস্থতাকারীরা লাভবান হলেও বাইরে পাচার হচ্ছে দেশের অর্থ আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ জুয়ারিরা। এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে তাদের পরিবার ও সমাজের উপর।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক জোয়ারী জানান, সারা বছরই বিভিন্ন ক্রিকেট টুর্নামেন্টকে কেন্দ্র করে জোয়া খেলা চলে। তবে এবারের আইপিএল ক্রিকেটে জুয়া খেলে তিনিসহ অনেকে পথে বসেছেন। তাদের কেউ কেউ আবার ঋণগ্রস্ত হয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুয়ার টাকা যোগান দিতে কেউ কেউ দামি মোবাইল ফোন, মোটরসাইকেল, জমি, সোনার গহনাসহ নানা দামি জিনিসপত্র বন্ধক রাখছেন। আর সুদের ব্যবসায়ীরাও টাকা নিয়ে বসে থাকছেন জুয়ার আসরের আশেপাশেই।
শুধু তাই নয়, এখন অনলাইন বেটিং সাইটগুলোতেও দিব্যি চলছে এমন জুয়া। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পপুলার হচ্ছে Bet365 নামে একটি জুয়ার সাইট। এই সাইট দিয়ে ডলারের মাধ্যমে স্থানীয় এজেন্টরা গ্রাহকদের বাজি ধরিয়ে দেন। এতে করে প্রতি টুর্নামেন্টে কোটি কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো একাধিক জুয়াড়ি বলেন, এখন আইপিএল টুর্নামেন্টের মাঝামাঝি সময় চলছে। এরই মধ্যে অনেকে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ঘরে বসেইে এজেন্টের কাছে ফোনের মাধ্যমে কথা বলে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা বাজি ধরা যায়। যে জোয়ারীর দল জিতবে তাকে পরের দিন ব্রোকারের মাধ্যমে জুয়ারীদের বাড়িতে টাকা পৌঁছে দেয়া হয়। এছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমেও টাকা লেনদেন করে থাকেন অনেক এজেন্টরা।
তারা আরো বলেন, জুয়া নিয়ন্ত্রণকারীরা প্রভাবশালীদের সাথে সখ্যতা করে দিনের পর দিন এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন। এই বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে হয়রানি করা হয়। তাই এদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে আসে না।
সমাজ সচেতনরা বলছেন, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবাধে চলছে জোয়ার মহোৎসব। এতে সমাজের অবক্ষয় ও অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। জুয়ার কালো থাবা থেকে সমাজকে মুক্ত করতে চাইলে অতি দ্রুত এই সিন্ডিকেটকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে শনাক্ত করে তাদের শক্ত হাতে প্রতিহত করা প্রয়োজন। আর তা না করা হলে ভবিষ্যতে এর বিরূপ প্রভাব আরও বাড়বে।