
নিজস্ব প্রতিবেদক।।
শেরপুর সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নে একটি রাস্তার নিম্নমানের কাজ করার প্রতিবাদ করে মোঃ শাখাওয়াত মিয়া@ শাখাওয়াত (২৪) নামের এক যুবককে কারাগারে যেতে হয়েছে। শাখাওয়াত মিয়া পার্শ্ববর্তী মুদিপাড়া গ্রামের সাদ মিয়ার ছেলে এবং বাজিতখিলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় গতরাতে ১০ জুলাই তার নীজ বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে (শাখাওয়াত) গ্রেফতার করে। ১১জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে শাখাওয়াতকে আদালতে পাঠালে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
এ ঘটনাটি বর্তমানে শেরপুরে টক অব দা টাউনে পরিণত হয়েছে। তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে এলাকাবাসীর মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনগন, মুক্তিযুদ্ধাসহ সুশীল সমাজের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
তাদের দাবি, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যদি এভাবে প্রভাবশালীদের রোষানলে পরতে হয় তাহলে কেউ আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাবেনা।
এ বিষয়ে শেরপুর জেলা মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযুদ্ধা নুরুল ইসলাম হিরু বলেন, “সত্যের পক্ষে যেসব এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন, তাদেরকে আমি সেলুট জানাই। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের তীব্র্র নিন্দা জানাচ্ছি। এই ঘটনাটা অত্যন্ত লজ্জার। নিম্নমানের কাজের অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে নির্বাহী প্রকৌশলি মো. মোস্তাফিজুর রহমানকে সাসপেন্ড করার প্রয়োজন ছিলো। এছাড়াও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও তাৎক্ষনিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিলো। অথবা তার লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত করার দরকার ছিলো।”
নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক ও শিক্ষাবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, “এই পৃথিবীতে যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে তারাই জুলুমের স্বীকার হয়েছে। এখানেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। আমাদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে। দুর্নীতি গিয়ে ঠেকেছে চরম পর্যায়ে। সামাজিক অবক্ষয়ের তলানিতে চলে গেছি আমরা। তবে এই ঘটনায় আমি নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি। তাহলেই মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।
জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৪ কোটি ৭ লাখ টাকায় এলজিইডি কর্তৃক বাস্তবায়িত শেরপুর সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের ‘বাজিতখিলা-গাজিরখামার’ সড়কের মেরামতের কাজ করছিলেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আকরাম এন্টারপ্রাইজ। নিম্নমানের কাজ করায় নির্মাণের শুরু থেকেই এলাকাবাসী প্রতিবাদ করে আসছিলেন। নির্মান কাজের অনিয়ম ছাড়াও রাস্তা খুড়াখুড়ি করে বেশ কয়েকবার কাজ বন্ধ করে রাখা হয়। ফলে অন্তত ২০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়ে।
কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অবৈধ ক্ষমতা খাটিয়ে তাদের খেয়াল খুশি মতো কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। সবশেষে বিটুমিন কার্পেটিং কাজ করার এক সপ্তাহের মধ্যেই সড়কের কোন কোন অংশে হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছিলো কার্পেটিং। এই পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ হয় এলাকাবাসী। এলজিইডি কে বারবার বলেও কোন প্রতিকার না পেয়ে এত ৩০ মে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী।
এদিকে নির্মানকাজের অনিয়ম নিয়ে দেশের স্বনামধন্য বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল ও অনেক পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়।
এলাকাবাসীরা জানান, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশের জেরে চাপে পড়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর প্রতিবাদিদের শায়েস্তা করতে ১০ জুলাই শেরপুর সদর থানায় মিথ্যা মামলা করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আকরাম হোসেন। মামলায় ১০ জনকে নামীয় ও ৪/৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়। যার নাম্বার-২৮। মামলায় অভিযোগ করা হয়, রাস্তা খুড়াখুড়ি করে ৫ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। এছাড়াও ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমদাদুল হক বলেন, “ঠিকাদার আকরাম হোসেন কয়েকজনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত শাখাওয়াত মিয়াকে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।