নিউজ ডেস্ক।।
তীব্র দাবদাহে পুড়ছে শেরপুর। গত ক’দিন থেকে তাপমাত্রা ৩৯-৪০ ডিগ্রিতে উঠানামা করছে। রবিবার থেকে তাপমাত্রা আরও দুই ডিগ্রী বৃদ্ধি পাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। সকাল থেকেই সূর্যের তাপ ছড়াচ্ছে। সেইসাথে বেড়েছে বাতাসে জলীয় বাষ্প। ফলে তাপদাহের সাথে শরীর ঘেমে তীব্র অস্বস্তিতে দুর্বিষহ হয়ে ওঠেছে জনজীবন। তার উপর বিদ্যুতের লাগাতার লোডশেডিং জনজীবনকে আরো অসহনীয় করে তুলেছে।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন কৃষি শ্রমিক, রিকশাচালক সহ নিম্নআয়ের মানুষরা। দাবদাহের কারণে অনেকেই ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। বৃষ্টি না হলে এই পরিস্থিতি সহসাই পরিবর্তন হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এই অসহনীয় পরিস্থিতিতে গত দু-তিনদিন থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে সালাতুল ইশতেসকার নামাজ আদায় করে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করছেন মুসল্লিরা। আজ সকালে সদর উপজেলার ভাটারা ঈদগাহ মাঠে এবং শ্রীবরদী উপজেলার ভেলুয়া ইউনিয়নের ঝগড়াচর ও কেকেরচর ইউনিয়নের লঙ্গরপাড়ায় মোট তিনটি স্থানে সালাতুল ইশতেসকার নামাজের পৃথক পৃথক জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে জেলায় পুরোদমে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটার মৌসুম। তীব্র দাবদাহের মধ্যে ক্ষেতের পাকা ধান কেটে মাড়াই কাজ করতে নাকাল হচ্ছে কৃষক এবং কৃষি শ্রমিকরা। সরেজমিনে গিয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলার বগাডোবি ব্রীজের কাছে ধান কাটার কাজে ব্যস্ত কৃষকদের কয়েকজন সাথে কথা বললে তারা ক্ষুভ প্রকাশ করে বলেন, ” আমরা কৃষিকাজ করতে এসে রোদে গরমে রাস্তার পাশের গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিতাম। কিন্তু মাসদুই আগে কোয়ারিরোড থেকে ঝিনাইগাতী পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তার হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ফলে এই তীব্র দাবদাহের মধ্যে মাঠের ধান কাটতে এসে একটু গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয়ার সুযোগ নেই।” অবিলম্বে রাস্তার পাশে গাছ লাগানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
এদিকে তাপপ্রবাহ ও অতিরিক্ত গরমের প্রভাবে বাড়ছে রোগ-বালাই। শিশু ও বৃদ্ধরাই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। রোগাআক্রান্তরা ছুটছেন সরকারি হাসপাতালে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন গড়ে ২০ জন রোগীসহ ৪০-৪৫ জন রোগী শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। এছাড়া হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরও অনেক রোগী।
জেলা সদর হাসপাতালে পর্যাপ্ত সংখ্যক শয্যা না থাকায় অনেক রুগী মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার উপর হাসপাতালের পরিবেশ নিয়ে রুগীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সামনে নোংরা-ময়লা, বাথরুমে ময়লা, তার উপর পানির সংকট। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি বাচ্চাদের কক্ষে ফ্যানের সংকট।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. খায়রুল কবির সুমন জানান, গরমের জন্য ডায়রিয়া সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৪০-৪৫ জন রোগী ভর্তি থাকেন। এখন প্রতিদিন গড়ে ২০ জন করে রুগী ভর্তি হচ্ছেন যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এই গরমে খুব প্রয়োজনে ঘরের বাইরে গেলে ছায়ায় থাকাতে এবং বেশি বেশি করে পানি পান করাতে সকলকে পরামর্শ দেন তিনি।