নিউজ ডেস্ক।।
গতকাল ভোরে শেরপুরের ব্রহ্মপুত্র নদের প্রত্যন্ত চরাঞ্চল হতে মৃত আব্দুল হালিম জীবন (৪৮) এর রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। এই ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।
উল্লেখ্য তিনি (আব্দুল হালিম জীবন) একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান পাসপোর্টধারী দ্বৈত নাগরিক। দীর্ঘ ২৫ বছর তিনি আমেরিকায় বসবাস করেছেন। এদিকে হত্যাকাণ্ডটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে এর রহস্য উদঘাটন করতে শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, অর্থ ও প্রশাসন (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), খোরশেদ আলম এর নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস টিম তদন্তে নামে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই হত্যা কান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সাথে জড়িত ছয় জনকে আটক সহ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকুটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আটককৃতরা হলেন, সদর উপজেলার সাতপাখিয়া ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ (৬৫)। তিনি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ ইলিয়াছ উদ্দিনের ছেলে।
অন্যান্যরা হলেন, মোবারক এ মোস্তাক (৩২), পিতা-মোঃ আবেদ আলী, সাং-ডাক পাড়া, মনোয়ারা বেগম (৩০), স্বামী-ফারুক হোসেন, সাং-কান্দা শেরীচর, মোঃ রকিব হোসেন জিহান (২০), পিতা-মোঃ আফিল উদ্দিন, কালু মিয়া (২৫), পিতা-মোঃ হযরত আলী, উভয় সাং-ডাকপাড়া, থানা-শেরপুর সদর, জেলা-শেরপুর ও রুপা বেগম (২৮), স্বামী-মেঃ ফারুক আহাম্মদ, সাং-শ্রীফলতলা, থানা-শাহজজাতপুর, জেলা-সিরাভাগঞ্জ, এ/পি সাং-পূর্ব শেরী, থানা-শেরপুর সদর, জেলা-শেরপুর।
এদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের সময় ধস্তাধস্তিতে আহত হয়ে মোঃ রকিব হোসেন জিহান ও কালু মিয়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এদিকে আজ দুপুরে হত্যা রহস্য উদঘাটন ও আসামীদের গ্রেফতারের তথ্য জানিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেছেন পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম। ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, আব্দুল হালিম জীবন নিঃসন্তান হওয়ায় দুই বছর পূর্বে বাংলাদেশে এসে ২য় বিয়ে করেন। এই বিয়েসহ পারিবারিক বিষয়ে তার (আব্দুল হালিম জীবন) পিতামাতার সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। জীবন ও তার স্ত্রী পিতার বিরুদ্ধে ২ টি এবং পিতা ছেলে জীবন এর বিরুদ্ধে ৪ টি মামলা করেন। একটি মামলায় জীবন এর পিতা প্রায় দেড় মাস কারাভোগ করে এক সপ্তাহ পূর্বে জামিনে আসেন।
এজন্য পরিবারের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তার আমেরিকান প্রবাসী আরেক ভাইএর বন্ধু শাহিনকে দিয়ে জীবনকে শায়েস্তা করতে বলেন। শাহিন তার ব্যবসায়িক পার্টনার আব্দুর রউফ (সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান) এর সাহায্য নেন। আব্দুর রউফ তার সাঙ্গপাঙ্গ কালু, ময়নাল, জিহাদ, মোবারকদের জীবনকে শায়েস্তা করতে নির্দেশ দেন।কালু তার পূর্ব পরিচিত মনোয়ারা ও রূপাকে বিষয়টি জানালে রুপা বেগম জীবন এর সাথে প্রেমের অভিনয় করে। পরে রুপা বেগম গত ৩০ মার্চ শনিবার বিকেল সারে তিনটায় জীবনকে ডেকে এনে কৌশলে আসামীদের হাতে তুলে দেয়। আসামী আব্দুর রউফ, কালু, ময়নাল, জিহাদ, মোবারকগন জীবনকে একটি ঘয়ে আটকে রেখে রাত নয়টার দিকে জীবন এর মোবাইল ফোন থেকে তার স্ত্রীর নিকট ৯৩ হাজার টাকা মুক্তিপন চেয়ে অপহরনের নাটক সাজানোর চেষ্টা করে। পরে আসামীরা জীবনকে ঘটনাস্থলে ফাকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে মারপিট ও ছুরিকাঘাত করে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। এসময় ধস্তাধস্তিতে আসামী কালু ও জিয়াদ আহত হয়।