শেরপুরের গারো পাহাড়ে হচ্ছে আনারস চাষ: কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা 

মো. নমশের আলম :

শেরপুরের গারো পাহাড়ে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে আনারস চাষ। জেলার সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ে চাষ হচ্ছে সুস্বাদু আনারস। স্থানীয়রা বলছেন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এবং বন্য হাতির আক্রমণ ঠেকাতে পারলে মুধুপুরের পর গারো পাহাড়ের হাজার হাজার হেক্টর পতিত জমি আনারস চাষের উজ্জ্বল ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে। এতে পাহাড় অঞ্চলের কৃষকরাও পেতে পারেন আর্থিক সচ্ছলতা। এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর। 

শেরপুরের ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ৪০ কিলোমিটার ব্যাপী সীমান্তজুড়ে রয়েছে গারো পাহাড়। এসব পাহাড়ি এলাকায় শত শত হেক্টর ভূমিতে একমাত্র কাসাভা আলু ছাড়া আর কোন আবাদ করা হতো না বললেই চলে। স্থানীয় বাজারে কাসাভার চাহিদা কম থাকায় এবং চাষ তেমন লাভজনক না হ‌ওয়ায় অধিকাংশ জমি প্রায় অনাবাদিই পড়ে থাকতো। ফলে অভাব-অনটন ছিল এখানকার কৃষকদের নিত্যদিনের সাথি। পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে বিক্রি, পাথর ভাঙা, লাল বালু তোলার শ্রমিকের কাজ করে অধিকাংশের জীবিকা নির্বাহ করতে হতো। বর্তমানে এসব এলাকার পরিশ্রমী কৃষকরা নতুন নতুন ফসল উৎপাদন করে এসব পাহাড়ি জনপদের কৃষিতে বিপ্লব এনে দিয়েছে। ফলে তাদের সংসার জীবনে এসেছে সচ্ছলতা। 

ঝিনাইগাতী উপজেলার পশ্চিম বাকাকুড়া গ্রামের আদিবাসী কৃষক জমশন ম্রং চার বছর আগে তার বাড়ির পাশের ১৮ বিঘা পতিত পাহাড়ি জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন আনারস চাষ। আর এতে সাফল্য‌ও পেয়ে যান তিনি। হাতির আক্রমণে ক্ষয়ক্ষতির পরেও ১৬ লাখ টাকার আনারস বিক্রি করেন তিনি। অনেকেই তার আনারস বাগান দেখতে এসে নিজেরাও চাষ করতে আগ্রহী হন। ইতোমধ্যেই ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ি উপজেলায় আনারস চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাকাকুড়া এলাকায় ১৮ বিঘা জমিতে আনারস চাষ করেছেন কৃষক আশরাফুল আলম। গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রের পাশেই ৩ বিঘা করে জমিতে আনারস চাষ করেছেন কৃষক জমশন ম্রং ও রিথাওই ম্রং। সারি সারি আনারস গাছে ইতিমধ্যে আনারসের কলি এসেছে। বন্য হাতির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে চারিদিকে সোলার ফেন্সিং ও বায়ু ফেন্সিং বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে পাকা আনারস বিক্রি করার আশা করছেন চাষিরা। আনারস চাষ শেরপুরের পাহাড়ি অঞ্চলে কৃষিতে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে, বলছেন কৃষক এবং কৃষি বিভাগ।

এখানে জলডুবি জাতের আনারস চাষ করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এসব আপনার রসে টইটম্বুর এবং মধুপুরের আনারসের চেয়ে অধিক মিষ্টি। কৃষকরা জানান, প্রথমবার তারা চারা সংগ্রহ করেছেন মধুপুর এবং রাঙামাটি থেকে। এখন নিজেরাই চারা উৎপাদন করছেন। কেউ চাইলে তারা চারা সরবরাহ করা সহ আনারস চাষে সবরকম সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। 

গজনী অবকাশ এলাকায় ৩ বিঘা জমিতে আনারস চাষে এক লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান চাষি জমশন ম্রং। সব খরচ উঠিয়ে তার ৩ লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি।

পশ্চিম বাকাকুড়া এলাকায় ১৮ বিঘা পাহাড়ি জমিতে দের লাখ আনারস চাষ করেছেন আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, প্রথমবার মধুপুর এবং রাঙ্গামাটি থেকে চারা সংগ্রহ করি। এখন নিজেই চারা উৎপাদন করছি। যে কেউ চাষের জন্য আমার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ এবং পরামর্শ পেতে পারেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ এই আনারস খুবই সুস্বাদু এবং চাষ লাভজনক হওয়ায় আশপাশের অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন‌। আনারস পাকার সময় হাতি ক্ষয়ক্ষতি করতে না পারলে বেশ ভাল ফলন এবং মুনাফা পাব বলে আশা করছি।’

এখানকার আরেক আনারস চাষি সুব্রত বলেন, ‘ দুই বছর যাবত জলডুবি আনারস চাষ করছি। আশা করছি গতবারের মতো এবার‌ও ভালো ফলন পাব।’

আনারসের ক্ষেতে পরিচর্যার কাজ করে অনেকেই আয়ের উৎস খুঁজে পেয়েছেন বলে জানান স্থানীয় বাকাকুড়া গ্রামের মো. বিজয় ও সবুর আলী সহ কয়েকজন শ্রমিক। 

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মুহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন,‘ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী মাটি এবং আবহাওয়া আনারস চাষের উপযোগী হ‌ওয়ায় কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছে। ঝিনাইগাতীর আবাদ দেখে উদবোধ্য    হয়ে নালিতাবাড়ী এবং শ্রীবরদীতেও চাষ হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়েও এসব আনারস পার্শ্ববর্তী জেলাতে বিক্রি করতে পারবে এবং এতে কৃষকরা লাভবান হবে।’

কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে এবং হাতির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করতে পারলে জেলায় বিশাল পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে আনারস চাষ। এতে অনাবাদি শত শত হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে এবং লাভবান হবে স্থানীয় কৃষকরা। 

এই ক্যাটাগরি থেকে আরো দেখুন...

শেরপুরে ৫২০ হেক্টর জমিতে বীজ আলুর চাষ : বাম্পার ফলনের আশা

  মোঃ নমশের আলম :    বাংলাদেশে আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। সারা বছরই আমাদের নানা রকমের রান্নার কাজে এবং বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যে আলুর ব্যবহার রয়েছে। পুষ্টিগুণে ভরপুর আলু উৎপাদনে সময়‌ যেমন…

বিস্তারিত পড়ুন...

অপার সম্ভাবনাময় শেরপুরের কৃষি পর্যটন

  অপার সম্ভাবনাময় শেরপুরের কৃষি পর্যটন     রফিক মজিদ সাংবাদিক, কলামিস্ট,কবি :   শেষ কবে খালি পায়ে শিশির ভেজা ঘাসে হেঁটেছেন? মনে পড়ছে কি কারো? আপনার নাগরিক জীবনে সেই…

বিস্তারিত পড়ুন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

খেলার খবর

শেরপুরে অনুর্ধ-১৭ জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন   

শেরপুরে অনুর্ধ-১৭ জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন   

নকলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সন্তানদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা

নকলায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সন্তানদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা

শেরপুরে ফুটবল খেলোয়াড় বাছাই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত  

শেরপুরে ফুটবল খেলোয়াড় বাছাই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত  

শেরপুরে ক্রিকেট প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান

শেরপুরে ক্রিকেট প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান

শেরপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

শেরপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

ভুটানকে ৭-১ গোলে হারিয়ে সাফ ফুটবলের ফাইনালে বাংলাদেশ 

ভুটানকে ৭-১ গোলে হারিয়ে সাফ ফুটবলের ফাইনালে বাংলাদেশ