নিজস্ব প্রতিনিধি :
৭ ডিসেম্বর শেরপুর জেলার জন্য মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল ও স্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে শত্রুমুক্ত হয় শেরপুর। মুক্ত শেরপুরে এদিন মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জগজিৎ সিং অরোরা হেলিকপ্টারযোগে অবতরণ করেন শেরপুর শহরের শহীদ দারোগ আলী পৌর পার্ক মাঠে। মুক্ত শেরপুরবাসী তাঁকে স্বাগত জানায় এবং চারদিক জয়বাংলা স্লোগানে মুখরিত করে। এখানে দাঁড়িয়েই বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, রেডিও মস্কো, আকাশবাণী সহ বিভিন্ন বেতার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ৭ দিনের মধ্যে ঢাকাকে মুক্ত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন জগজিৎ সিং অরোরা।
মুক্তিযুদ্ধে শেরপুর ছিল ১১ নং সেক্টরের আওতাধীন। হানাদার বাহিনী ১৯৭১ এর ২৬ এপ্রিল শেরপুর শহরে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থানে ঘাঁটি গাড়ে। ১১ নং সেক্টরের বিপরীতে জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতীর আহম্মদনগরে গড়ে তুলে সেক্টর হেড কোয়ার্টার। পাক আর্মিরা রাজাকার, আলবদরদের যোগসাজশে ঘাঁটিগুলোতে চালাতে থাকে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট।
স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ ৯ মাসে জেলার ৫টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪০টি ছোট বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। জানা যায়, সেসব যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন ৮৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এছাড়াও পাক হানাদারদের গণহত্যার শিকার হয়েছেন অসংখ্য নিরীহ মানুষ। ২৫ জুলাই নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামে ১৮৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়। সেই হত্যাযজ্ঞে সোহাগপুর গ্রামটির নাম পাল্টে হয়ে যায় বিধবাপল্লী। ঝিনাইগাতী উপজেলার জগৎপুর গ্রামে নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে হত্যা করা হয় ৬১ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে এবং ৫ জুলাই কালিবাড়ীর পাশে কাটাখালি ব্রিজ ধ্বংস করে ফেরার পথে পার্শ্ববর্তী রাংগামাটিয়া গ্রামে পাক আর্মিদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে কমান্ডার নাজমুল আহসান সহ ৩ মুক্তিযোদ্ধা ও ৯ গ্রামবাসী শহীদ হন। ২৪ নভেম্বর সদর উপজেলার সূর্য্যদী গ্রামে প্রতিরোধ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ শহীদ হন ৬৯ জন।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জেলার শ্রীবরদী উপজেলার একজন বীরবিক্রম ও দুইজন বীর প্রতীক উপাধি পেয়েছেন। এঁরা হলেন, ‘শহীদ শাহ মু’তাসীম বিল্লাহ খুররম বীর বিক্রম’ ও তাঁর চাচাতো ভাই ‘ডা. মাহমুদুর রহমান বীর প্রতীক’ এবং ‘কমান্ডার জহুরুল হক মুন্সি বীর প্রতীক বার’।
উল্লেখ্য ১১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারাই প্রথম ঢাকায় প্রবেশ করেন। ১১ নং সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহের বেশ কয়েক বার কামালপুর দুর্গে আক্রমণ চালান। অবশেষে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণে টানা ১১ দিন অবরুদ্ধ থাকার পর ৪ ডিসেম্বর এ ঘাঁটির পতন হয়। ২২০ জন পাকিস্তানি সেনা এবং বহু সংখ্যক রেঞ্জার, মিলিশিয়া ও রাজাকার সদস্য বিপুল অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। ধানুয়াকামালপুর ঘাটি পতনের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা শেরপুরের পাক ক্যাম্প সমূহ দখল করে নেয়। ৪ ডিসেম্বর ঝিনাইগাতী ৬ ডিসেম্বর শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ীর ক্যাম্প সমূহ ছেড়ে এসে পাকিস্তানি সেনারা ৬ ডিসেম্বর রাতের আধারে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে জামালপুর পিটিআই ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। ৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় শেরপুর।