![](https://dainiksherpur.com/wp-content/uploads/2024/12/20241206_1548303.jpg)
দৈনিক শেরপুর রিপোর্ট :
আজ ৬ ডিসেম্বর শুক্রবার শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মিত্র বাহিনীর তীব্র আক্রমণে টিকতে না পেরে আজকের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী ও তাদের দোসররা শ্রীবরদী ছাড়তে বাধ্য হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনী শ্রীবরদী, ভায়াডাঙ্গা, ঝগড়ার চর ও কুরুয়াতে ক্যাম্প স্থাপন করে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, সেই সময় কাটাখালি, ভায়াডাঙ্গা বাজার, ফুলকারচর, তেনাচুড়া, টিকরকান্দি, রাঙাজানসহ বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ডযুদ্ধ হয়েছে। পাকসেনারা অনেক বাড়ি ঘরে হামলা করে লুটপাট চালায়। আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ঘরবাড়ি। চালানো হয় গণহত্যা, ধর্ষিতা হন অনেক মা বোন। একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত সেই দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে এখনো শিউরে উঠেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
৩ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক দেড়টায় শালচূড়া ক্যাম্পের পাক আর্মিরা পিছু হটে এবং আহম্মদনগর হেড কোয়ার্টারের সৈনিকদের সাথে নিয়ে রাতেই মোল্লাপাড়া ও কালিবাড়ী ক্যাম্প গুটিয়ে শেরপুরে আশ্রয় নেয়। হানাদারমুক্ত ঝিনাইগাতীতে ৪ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।
মিত্র বাহিনীর আক্রমণে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী ও দুর্ভেদ্য ধানুয়া কামালপুর দুর্গের পতনের পর ৪ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর সদস্যরা পিছিয়ে এসে শ্রীবরদীর দিকে অবস্থান নিতে থাকে। খবর পেয়ে ১১ নং সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহেরের তার নেতৃত্বে গেরিলা সৈনিকরা রাস্তার বিভিন্নস্থানে অবস্থান নেন। ৫ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি মেজর আইয়ুব সাঁজোয়া যান নিয়ে কামালপুর হতে বকশিগঞ্জ-শ্রীবরদী পথে জামালপুর যাচ্ছিলেন। এই সড়কের টিকরকান্দি এলাকায় তার বহরে প্রবল আক্রমণ চালায় মিত্র বাহিনী। রাতভর চলে সম্মুখযুদ্ধ। গুলি আর স্থলমাইন বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে এলাকার লোকজন ভয়ে ঘরবাড়ি ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে থাকেন। এ যুদ্ধে নিহত হয় মেজর আইয়ুবসহ বেশ কিছু পাকসেনা। ৬ ডিসেম্বর ভোরে মিত্র বাহিনীর আক্রমণে ক্যাম্প ছেড়ে হানাদার বাহিনী শ্রীবরদীর লংগরপাড়া হয়ে শেরপুরের দিকে পিছু হটে।
পাকসেনাদের পলায়নের খবরে খবর পেয়ে ভোর হতে শতশত লোক জড়ো হয় শ্রীবরদী-বকশিগঞ্জ সড়কে। সবার কণ্ঠে উচ্চারিত হয় গগনবদারী স্লোগান ‘জয়বাংলা’। দলে দলে উচ্ছ্বসিত মানুষ আর মুক্তিযোদ্ধারা এসে জমায়েত হন শ্রীবরদী পুরাতন হাসপাতাল মাঠে। এখানেই আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বীর প্রতীক (বার) জহুরুল হক মুন্সি ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রেজ্জাক।