ছবি সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সিরিয়ার বাশার-আল-আসাদ সরকারের পতনে কার কতটুকু লাভ হলো এই হিসাব শুরু হয়ে গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন ‘লাভের গুড়’ খেতে পারে ইজ়রায়েল এবং তুরস্ক।
দেশটিতে বিদ্রোহীরা ক্ষমতায় আসায় সবচেয়ে প্যাঁচে পড়েছে ইরান। এত দিন তারা সিরিয়াকে বাফার রাষ্ট্র হিসেবে ব্যবহার করছিল। দামেস্কের ভূমি ব্যবহার করে লেবাননের ‘হিজ়বুল্লা’র কাছে পৌঁছচ্ছিল উন্নত হাতিয়ার। এখন সেই সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। ইতোমধ্যেই ১৯৭৪ সালের পর প্রথমবারের মতো ইসরাইলি ট্যাংক সিরিয়া সীমান্ত অতিক্রম করেছে।আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের দাবি, সিরিয়ার সঙ্কটে ইজ়রায়েল এবং তুরস্ক দেশটির বেশ কিছুটা জমি হাতিয়ে নিতে পারে। ‘গ্রেটার ইহুদিভূমি’ তৈরির স্বপ্নপূরণের দিকে পা বাড়ানোর সুযোগ পেয়ে যাবে তেল আভিভ, অন্য দিকে আধিপত্য বাড়বে তুরস্ক। আবার এর মাধ্যমে আরব দুনিয়া থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করতে এবং পশ্চিম এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব কয়েক গুণ বাড়িয়ে নিতে পারবে ওয়াশিংটন।
ভূমধ্যসাগরের তীরে সিরিয়ার রুশ সেনাঘাঁটিগুলি কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সমঝে চলছিল যুক্তরাষ্ট্রের নৌসেনাও। দামাস্কাসের দখল বিদ্রোহীদের হাতে যাওয়ায় হাফ ছেড়ে বাঁচল আমেরিকা। করণ এখন রাশিয়া তাঁদের ঘাঁটি গুটাতে বাধ্য হবে।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দামেস্ক বিদ্রোহীদের দখলে আসতেই দেশ ছেড়েছেন প্রেসিডেন্ট আসাদ। সিরিয়ার সেনাকর্তারা জানিয়েছেন, বিমানে উঠেছেন তিনি। তবে সিরিয়ার হোমস শহরের আকাশ থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় সেই বিমান। মনে আসাদ কোথায় পালিয়েছেন, তা জানাতে পারেননি কেউই। এদিকে ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ গাজ়ি জালালি।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ১৩ বছর ধরে চলা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আমেরিকার যে সমস্ত স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে, এমনটা ভাবলে ভুল হবে। এই অবস্থায় ঘুরে দাঁড়াতে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারেন আসাদ। ঠিক যেমনটা ২০১৩ ও ২০১৭ সালে করেছিলেন তিনি। আমেরিকার গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, দেশে ছেড়ে না পালিয়ে গুপ্ত রাসায়নিক অস্ত্রভান্ডারে আশ্রয় নিয়েছেন আসাদ। হাল না-ছেড়ে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে শেষ অবলম্বন হিসাবে এ বার ওই হাতিয়ার ব্যবহার করবেন তিনি।
জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসার পর ওয়াশিংটনের সিরিয়া নীতিতে বড় পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। ইতোমধ্যেই সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘সিরিয়ার পরিস্থিতি খুব ঘাঁটা। কিন্তু ওরা আমাদের বন্ধু নয়। এই গৃহযুদ্ধে আমেরিকার কিছু করার নেই। এটা আমাদের লড়াই নয়। ওখানে যা হচ্ছে, হোক। আমরা এর মধ্যে নাক গলাব না।’’ আর তাতে স্বস্তি পেয়েছে মস্কো।
আসাদের টিকে থাকার অবলম্বন ছিল রাশিয়া ও ইরান। দু’টি দেশের তরফেই পাশে থাকার আশ্বাস পেয়েছেন ‘পলাতক’ প্রেসিডেন্ট আসাদ। বিদ্রোহীদের থেকে আলেপ্পো পুনর্দখল করতে সেখানে বিমানহানা চালিয়েছে মস্কো। পাশাপাশি দামাস্কাসের পতন বাঁচাতে ‘শিয়া মিলিশিয়া’ পাঠিয়েছে ইরান।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সিরিয়ার বিদ্রোহী দুই সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র সঙ্গে কুখ্যাত জঙ্গি গোষ্ঠী ‘আল কায়দার’ দহরম মহরম রয়েছে। ফলে লম্বা সময় ধরে ওয়াশিংটনের পক্ষে তাঁদের সমর্থন করে যাওয়া একরকম অসম্ভব। রাশিয়া সেই সুযোগ কাজে লাগালে পশ্চিম এশিয়ার মাটি যে ফের রক্তে ভিজবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সর্বশেষ সিরিয়া নিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ৫ আরব দেশসহ আট দেশ। কাতার, সৌদি আরব, জর্দান, মিশর, ইরাক, ইরান-তুরস্ক-রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সতর্ক করে বলেছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি সিরিয়ার নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। খবর আল জাজিরা। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জোর দিয়ে বলেছেন, সিরিয়ায় সব পক্ষকে রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে, যা সামরিক অভিযান বন্ধ করবে এবং সাধারণ মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।