সংগৃহীত ছবি
অনলাইন ডেস্ক :
ইরানে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলে ইরানের ১৮১টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হামলার ঠিক ২৫ দিন পরে এই প্রতিরোধমূলক পালটা হামলা চালালো ইসরায়েল।
বিজ্ঞাপন
আই২৪ নিউজের প্রতিবেদনে প্রকাশ হামলায় ইসরায়েলের ১৪০টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয়। শনিবার (২৬ অক্টোবর) আল জাজিরার লাইভ প্রতিবেদনে বলা হয়, তেহরানে দফায় দফায় বিশাল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। শনিবার ইসরায়েলে স্থানীয় সময় রাত প্রায় ২টার দিকে ইরান থেকে প্রথমবারের মতো বিস্ফোরণ ঘটার খবর আসতে শুরু করে।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইরানে যখন ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালাচ্ছিল তখন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বাংকারে ছিলেন। তেল আবিবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে একটি ভূগর্ভস্থ কক্ষে (বাংকার) ছিলেন নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট।
বিজ্ঞাপন
ইসরায়েলের স্থানীয় সময় রাত ২টা ৩০ মিনিটে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র নিশ্চিত করে বলেন, ‘আইডিএফ ইরানের বিভিন্ন সামরিক লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট হামলা শুরু করেছে। এটা চলিত মাসের প্রথমদিকে ইসরায়েলে চালানো ইরানি হামলার জবাব।’
তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তিন ধাপে তীব্র হামলা চালানো হয়। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও ড্রোন ইরানের তিনটি প্রদেশে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে এই হামলা করে। হামলায় রাজধানী তেহরানে এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় খুজেস্তান ও ইলাম প্রদেশে সামরিক কমপ্লেক্স, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কারখানা লঞ্চারগুলোকে লক্ষ্যস্থল করে।
বিজ্ঞাপন
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০টি ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্যে আঘাত হানা হয়েছে। ইসরায়েলি হামলার ‘আনুপাতিক প্রতিক্রিয়া’ দেখানো হবে বলে ইরানের আধা স্বায়ত্তশাসিত একটি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে।
প্রথম ধাপে ইরানে হামলার আগে সিরিয়ার রাডারে বিমান হামলা করে ইসরায়েল। ইরান যেন সিরিয়ার রাডার থেকে আগেভাগেই বিমান হামলার তথ্য জানতে না পারে সেজন্য এই কৌশলের আশ্রয় নেয় তারা। এসময় সিরিয়ার পাশাপাশি ইরাকে থেকেও বিস্ফোরণের খবর আসে। হামলার প্রথম ধাপে তিনটি দেশেরই বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে লক্ষ্যস্থল করা হয় বলে বিভিন্ন খবরে ইঙ্গিত দেওয়া হয়। এ সময় তিনটি দেশেরই আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
৭১ টেলিভিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের দাবিতে বলা হয় ইরান থেকে ৭০ মাইল দূরে ইরাকের মার্কিন নিয়ন্ত্রণে থাকা আকাশসীমা থেকে ইরানের বেশ কয়েকটি সামরিক ও রাডার সাইটে আঘাত করেছে তেলআবিবের যুদ্ধ বিমান।
ইসরায়েলি বিমানবাহিনী যেন কোনো বাধা ছাড়াই ইরানের লক্ষ্যস্থলগুলোতে হামলা চালাতে পারে সেজন্য প্রথম ধাপে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপর হামলা চালায় তেলআবিব।
তবে ঘটনার সময় পরিস্থিতি পরিষ্কার ছিল না। বিস্ফোরণের শব্দে রাস্তায় নেমে আসেন তেহরানের আতঙ্কিত বাসিন্দারা। ইরানের রাজধানীর বিমানবন্দরগুলোতে আঘাত হানা হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছিলেন তারা। এ সময় ইরান জানায়, তেহরান ও অন্যান্য স্থান থেকে যে বিস্ফোরণের শব্দগুলো পাওয়া যাচ্ছে তা ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ইসরায়েলি হামলা প্রতিরোধের আওয়াজ।
এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিবিসি জানায়, ইসরায়েল ইরানের কোন কোন স্থাপনায় আঘাত হানছে তা পরিষ্কার নয়।‘সামরিক লক্ষ্য’ ছাড়া অন্য স্থাপনাকেউ লক্ষ্যস্থল করা হচ্ছে কি না, ইসরায়েল তখনও তা জানায়নি।
বিজ্ঞাপন
ভোররাত ৪টার আগ পর্যন্ত ইরানের কোথায় ও কোন স্থাপনায় হামলা চালানো হচ্ছে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো সে বিষয়ে জানতে পারেনি। এসময় ইরান তাদের আকাশে হামলা প্রতিরোধের চেষ্টা করছে এমন কিছু ফুটেজ গণমাধ্যমের হাতে আসে।
হামলার সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট একটি ব্যাঙ্কারে আশ্রয় নেয়। ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলোর আকাশে থাকা অবস্থায়ই দেশটির নেতানিয়াহুও ইয়োভ গ্যালান্ট অপারেশনস ডিরেক্টরেটের কমান্ডের বাংকারে বসে আছেন, এমন ছবি প্রকাশ করতে শুরু করে নেতানিয়াহুর দপ্তর।
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, সর্বশেষ ভোর সাড়ে পাঁচটায় হামলা শেষ করা হয়। এ সময় ইরানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র, ইউএভি ও উৎক্ষেপণ স্থানগুলোতে হামলা চালানো হয়।
ভোর ৬টায় আইডিএফ ঘোষণা করে, তাদের যুদ্ধবিমানগুলো ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও স্থল থেকে স্থলে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলোতে আঘাত হানার পর নিরাপদে ফিরে এসেছে।
এরপর এক বিবৃতিতে ইরানে হামলার বিস্তারিত তুলে ধরে আইডিএফ। এই ঘোষণার প্রায় ২০ মিনিট পর সাংবাদিকদের হোয়াইট হাউজের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে পুরোপুরি সমর্থন করে আর ইরানকে ইসরায়েলে পালটা হামলা না চালানোর জন্য সতর্ক করেছে। তবে ইসরায়েলের ধারণা, ইরান এ হামলারও জবাব দেবে।