সংগৃহীত ছবি:
আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
ইসরায়েলে হামলা চালাচ্ছে হিজবুল্লাহ। আবার দক্ষিণ লেবাননে বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। দুই পক্ষই যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফলে বড় ধরনের যুদ্ধের শঙ্কা জোরালো হচ্ছে। ইসরায়েল উত্তরের ভূগর্ভস্থ হাসপাতাল প্রস্তুত করেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ‘বৈরুতকে গাজায় পরিণত করার’ হুমকি দিয়েছেন। অন্যদিকে, হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ, ‘লেবাননে হামলা হলে কোনো সংযম ও নিয়ম নেই’ বলেও সতর্ক করেছেন।
৭ অক্টোবরের পর থেকেই ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা দেখাচ্ছে হিজবুল্লাহ। তাদের রকেট নিক্ষেপের ফলে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। জবাবে ইসরাইলি বিমান হামলায় দক্ষিণ লেবাননর হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
চলমান উত্তেজনার মধ্যে পদত্যাগ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু মিলার। ইসরায়েলের ফিলিস্তিনবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলতি সপ্তাহে পদত্যাগ করেছেন।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
আলজাজিরার খবরে প্রকাশ, আক্রান্ত হলে হিজবুল্লাহ আত্মরক্ষার সামর্থ্য রাখে বলে জানিয়েছে ইরান। ইরান হিজবুল্লাহর সাথে থাকলেও ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক জ্যাক সুলিভান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠক করে ইসরায়েলের প্রতিনিধি দল। সেখানেই ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তারা।
ইসরাইলিরা কি ভাবছেন
যুদ্ধ চাইছেন না ইসরাইলি জনগণ। টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, শাউল গোল্ডস্টেইন নামের বিদ্যুৎ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘তারা ভালো অবস্থায় নেই। একটি প্রকৃত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নন। তারা ফ্যান্টাসির মধ্যে আছেন। হিজবুল্লাহর সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে ইসরায়েল ‘জনশূন্য’ হয়ে পড়বে।’
জাতিসংঘ মহাসচিবের সতর্কতা
সংঘাত এড়াতে চেষ্টা করছে জাতিসংঘ। দুপক্ষের উসকানিমূলক বক্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘একটি বেপরোয়া পদক্ষেপ, ভুল বোঝাবুঝি বিপর্যয় ঘটাতে পারে, যা সীমানা ছাড়িয়ে যেতে পারে, এমনকি কল্পনাকেও। এ অঞ্চলের মানুষ ও বিশ্ব লেবাননকে আরেকটি গাজায় পরিণত হতে দিতে পারে না।’
গুতেরেস বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা উত্তেজনা নিরসন ও ভুল বোঝাবুঝি ঠেকাতে কাজ করছেন। বিশ্বকে সোচ্চার হয়ে স্পষ্ট করে বলতে হবে, অবিলম্বে উসকানি বন্ধ করা কেবল প্রয়োজনই নয়, এটা অপরিহার্য।’
হুমকি পাল্টা হুমকি
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলছে, তারা লেবাননে সামরিক অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। বুধবার এক টেলিভিশন ভাষণে হিজবুল্লাহ প্রধান বলেছেন, ‘লেবাননে হামলা চালালে ইসরায়েলের কোনো স্থানই আমাদের রকেটের বাইরে পাবে না। সাইপ্রাস লেবাননে হামলার জন্য ইসরায়েলকে তাদের আকাশসীমা খুলে দিলে সাইপ্রাসেও হামলা চালানো হবে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ সাইপ্রাসেও হামলা চালানো হলে ইইউ ও যুক্তরাজ্যও সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে বড় যুদ্ধের শঙ্কায় বাইডেন প্রশাসন উসকানি বন্ধ করতে বিশেষ দূত অ্যামস হচস্টেইনকে মাঠে নামিয়েছে।
রাফায় ইসরায়েলি সেনা, হামাস ও ফিলিস্তিনের অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। ইসরায়েলি বিমানবাহিনী লেবাননের দক্ষিণে হিজবুল্লাহর কয়েকটি স্থাপনার ওপর হামলা চালিয়েছে। হিজবুল্লাহও ইসরায়েলের উত্তরে ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ইরান-সমর্থিত হামাস, ইয়েমেনের হুতি ও সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকার সহ আরো নানা পক্ষ জড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দুপক্ষের সর্বাত্মক যুদ্ধ বেধে গেলে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ইসরাইল কতটা নিরাপদ
হামাসের চেয়ে হিজবুল্লাহ অনেক বেশি শক্তিশালী। আর কতটা শক্তিশালী সেই সক্ষমতাও তারা দেখিয়েছে। চলতি মাসেই একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, উত্তর ইসরায়েলে আয়রন ডোমে ড্রোন হামলার দৃশ্য। চলতি সপ্তাহে ড্রোন থেকে ধারণ করা ৯ মিনিটের এক ভিডিওতে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার চিত্র ধরা পড়েছে।
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে—এমন ক্ষেপণাস্ত্র ও অস্ত্রশস্ত্রের অনেক বড় মজুদ রয়েছে হিজবুল্লাহর হাতে। ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা বলেছেন, এসব অস্ত্র দিয়ে হিজবুল্লাহ বড় ধরনের হামলা চালালে সেগুলো ঠেকানোর সক্ষমতা হারাতে পারে আয়রন ডোম।
ইসরায়েলের গর্ব ২৯০ কোটি ডলারের আয়রন ডোম সাম্প্রতিক সময়ে হামাস ও হিজবুল্লাহর হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমাদের পর্যালোচনা বলছে, আয়রন ডোমের কয়েকটি ব্যাটারির পাল্টা হামলা ঠেকানোর পুরো সক্ষমতা নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কর্মকর্তা আশঙ্কা করে বলেছেন, হিজবুল্লাহর সঙ্গে পুরোদমে যুদ্ধ বেধে গেলে ইসরায়েল ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। আয়রন ডোম হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সামাল দিতে পারবে না। তাঁদের ভাষ্যমতে, ইসরায়েলের আয়রন ডোমসহ আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের সংখ্যা বেশি। সে কারণে তাদের হামলা পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব নাও হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই কর্মকর্তারা সিএনএনকে বলেছেন, ইসরায়েল ভয় পাচ্ছে—হিজবুল্লাহর বিপুল পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মুখে ঝুঁকিতে পড়তে পারে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেছেন।